জীবনের একটা দীর্ঘ সময় আব্বু চট্টগ্রামে ছিলেন। আমার মনে আছে, যখন স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষার পর ঢাকায় যেতাম, তখন আব্বু সাথে থাকলে বাস বা ট্রেন স্টেশনে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘন্টা আগে গিয়ে বসে থাকতে হতো এ নিয়ে আম্মা অনেক রাগারাগিও করতেন, কিন্তু আব্বুর এক কথা, দুই ঘন্টা আগে গিয়ে বসে থাকতে হবে। বন্ধু বান্ধবের সংখ্যা আমার হাতে গোনা। সুুমি- ঈশিদের (নাসিরাবাদ গার্লস কলেজের তৎকালিন প্রিন্সিপাল অধ্যাপক শামসুন্নাহার আলী নাহার আন্টির মেয়ে) বাসা ছাড়া তেমন কোন বান্ধবীদের বাসায় আমি যেতাম না। ঈশি আর আমি নার্সারীর বন্ধু। ওদের বাসায় বেড়াতে গেলে আব্বু বার বার বলে দিতেন সন্ধ্যা ৬টা’র মধ্যে যেন বাড়ী ফিরি। ৬টা বাজার এক মিনিট দেরী হলে আব্বু মনে মনে ক্ষুব্ধ হতেন, মুখে কিছু বলতেন না, তবে তার চাহনী দেখেই আমি যা বুঝার বুঝে নিতাম।আমরা হয়তো প্রচন্ড বিলাসিতায় মানুষ হইনি, কিন্তু আমাদের পরিবারে সচ্ছলতা ছিল। ইংরেজী নতুন বছরের প্রথম দিনে আব্বু আমাদের সবাইকে নিয়ে চাইনিজ খেতে যেতেন। সে’ সময়ে তুংফং আর টাইওয়া রেস্টুরেন্ট ছিল আমাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম সারিতে। আমাদের বাসায় পহেলা বৈশাখ পালন করা হতো খুব জাঁকজমকপূর্ণভাবে। আব্বু সকাল হতেই বেড়িয়ে পড়তেন আমার ভাই যামীকে সাথে নিয়ে মিষ্টি আর ফুল কেনার জন্য। নিজস্ব সংস্কৃতিকে আব্বু ভালবাসতেন, ধারণ করতেন এবং আমাদেরকেও ভালবাসতে শিখিয়েছেন। আম্মা ব্যস্ত হয়ে পড়তেন রান্না নিয়ে। কি না রান্না হতো সেদিন… বিভিন্ন রকমের ভর্তা, সব্জি, ডাল, মাছ থেকে আরম্ভ করে পোলাও, কোর্মা.. প্রায় ২৭-২৮ পদের রান্না করতেন আম্মা। পহেলা বৈশাখের দিন অবধারিতভাবে ভাবে আমাদের বাসায় দুপুরে খেতেন শামসু চাচা ( সদ্য প্রয়াত বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, প্রত্নতত্ত্ব গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যাদুঘরের সাবেক কিউরেটর প্রফেসর ড. শামসুল হোসাইন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, প্রত্নতত্ত্ব গবেষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক কিউরেটর প্রফেসর ড. শামসুল হোসাইন), মান্নান চাচা ( অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, প্রাক্তন ভিসি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), শফি চাচা ( প্রয়াত শিল্পী শফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক , চারুকলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়), খালেদ চাচা ( প্রয়াত ভাস্কর সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ, অধ্যাপক,চারুকলা বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)।আমরা তিন ভাই বোন সব সময় আব্বুর পছন্দটাকে প্রাধান্য দিয়েছি।আমার খুব শখ ছিল ফাইন আর্টস পড়বো, ছবিও মোটামুটি ভালই আঁকতাম। চুরি করে আব্বুর ক্যানভাসে অনেক ছবি এঁকেছি। কিন্তু আব্বু বললেন, বিবিএ পড়ো। বললেন, আর্টিস্টের জীবন অনেক কষ্টের, অনেক struggle করতে হয়।আমি পিতা হয়ে সন্তানের কষ্ট সহ্য করতে পারবো না। ব্যস, আর্টিস্ট হওয়ার স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেল। আমি ব্যাংকার হয়ে গেলাম। এ নিয়ে একটা সময় মনে মনে খুব আফসোস থাকলেও এখন মনে হয়, আব্বুর সেই দিনের সিদ্ধান্তটা যদি মেনে না নিতাম, তাহলে আমার জীবনটা হয়তো এখনকার মতো স্বাছন্দ্যময় হতো না।

Born 17 August 1932
Died 15 August 2020 (aged 87)
Resting place Banani Graveyard
Murtaja Baseer was a Bangladeshi painter and artist known for his abstract realism themed works. He was also a poet, author, researcher, numismatist, and filmmaker. He was awarded the Ekushey Padak, Bangladesh’s second highest civilian honor, in 1980, and the Swadhinata Padak, or Independence Day Award, Bangladesh’s highest state award, in 2019.
- Independence Day Award (2019)
- Ekushey Padak (1980
- Sultan Padak, Narail (2003)
- Star Lifetime Award (2016)
- Best Cover Design, National Book Centre, Dhaka (1976)
- Academy Award by Bangladesh Shilpakala Academy (1975)
- Prix National, Festival of Paintings, Cagnes-sur Mer, France (1973)
বাবার যত কথা : পর্ব ৩ – মুনিজা বশীর
