আব্বুর চারপাশে একটা অদৃশ্য বলয় ছিল। সহজে কেউ ঐ বলয় ভেদ করে তাঁর কাছাকাছি যেতে পারতো না। তবে একবার যদি কেউ ঐ বলয়টা ভেদ করে তাঁর কাছে যেতে পারতো, তাহলে দেখতো কঠিন বলয়ের ভিতর একেবারেই একটা অন্য মানুষ, অনেক বেশী বন্ধু বৎসল। প্রচন্ড ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলতেন।ওনার মধ্যে এক ধরনের সম্মোহনী শক্তি ছিল। ঘন্টার পর ঘন্টা উনি বলে যেতেন আর অন্যরা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতো।আব্বুর মধ্যে যেটা সব সময় দেখতাম, তা হলো যে কোন বিষয়ে জানার ব্যাপারে প্রচুর আগ্রহ।
চাইতেন, এমন কোন শিল্পকর্ম সৃষ্টি করতে, যার মধ্যে তিনি বেঁচে থাকবেন আজীবন, তাঁর সত্বা, তাঁর অস্তিত্ব মানুষের মধ্যে চির জাগরূক হয়ে থাকবে। তাই একে একে জাতিকে উপহার দিয়েছেন “এপিটাফ অফমারটিয়ার,দেয়াল,কান্তোস, উইংস, কলেমা তায়্যেবা, পাখা হাতে রমণীর মত বিখ্যাত সিরিজগুলি।তিনি গতানুগতিক বাঙ্গালী বাবাদের মত ছিলেন না। ইউরোপে পড়ালেখার সুবাদে তাঁর মন মানসিকতায় ছিল পাশ্চাত্যের প্রভাব। সময়ানুবর্তিতা, নিয়মানুবর্তিতা, কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও সততা আমার মধ্যে যা আছে, সবটুকুই আমার বাবার অবদান।ছোটবেলা থেকেই আব্বুকে দেখে এসেছি ঘড়ির কাঁটা ধরে চলতে।সময় মত ঘুম থেকে উঠা, সময় মত সকালের প্রাত:রাশ সারা।
কিংবা দুপুরের খাওয়া, রাতের খাওয়া সবই সময় ও নিয়মের মধ্যে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতেন, রাতে খুব তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তেন। আমরা যখন স্কুল কলেজে পড়ি তখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আমরা রাতের খাওয়া সেরে রাত আটটা থেকে নয়টার মধ্যে শুয়ে পড়তাম। আম্মা অবশ্য একটু দেরী করতেন।