বাংলাদেশের চিত্রশিল্পীদের মধ্যে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যারা আন্তর্জাতিক হতে পেরেছেন মুর্তজা বশীর তাদের অন্যতম। শিল্পাচার্য ও তাঁর সতীর্থদের প্রতিষ্ঠিত ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রথম প্রজন্মের শিল্পী তিনি। দেশবিভাগ-পরবর্তী অস্থিরতা ও এলোমেলো পরিস্থিতির মধ্যে একটি রক্ষণশীল পরিবারের সন্তানদের শিল্পকলা অধ্যয়নের পথটি খুব মসৃণ ছিল না। কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘পত্রী’ নামক সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকায় ‘আমার কথা’ প্রবন্ধে মুর্তজা বশীর লিখেছেন কীভাবে একটি মুসলিম রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম নিয়ে ধর্মীয় অনুশাসনের বেড়াজাল ছিন্ন করে আবুল খায়ের মুর্তজা বশীরুল্লাহ ‘মুর্তজা বশীর’ হলেন।
শুধু তিনিই নন, ঐ সময়ে যারা চিত্রকলাবিদ্যা অধ্যয়ন করেছেন, তাদের অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে, যার মধ্যে প্রথমটিই ছিল পারিবারিক অসম্মতি। কিন্তু আধুনিক মন ও মনন দ্বারা তারা সেই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করার পাশাপাশি এদেশের শিল্পকলা চর্চাকে এমন একটা শক্ত ভিত্তি দিতে সক্ষম হয়েছেন যার ওপর দাঁড়িয়ে উত্তরপ্রজন্ম চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তাকে আরো ঋদ্ধ করে চলেছে।
দেশবিভাগ পরবর্তী সময়টাকেই যদি আমরা বাংলাদেশের শিল্পকলা চর্চার সূচনাকাল ধরি, তবে দেখতে পাই, তখনই এই কলাচর্চা দু’টি ভিন্নমুখী ধারায় এগিয়েছে: একটি বাংলার লোকজ-ঐতিহ্য সমৃদ্ধ ধারা, অন্যটি পাশ্চাত্য শিল্পপ্রবণতা ও আঙ্গিক-নির্ভর ধারা; যার প্রধান গন্তব্য বিমূর্ততায়। জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসান, এস এম সুলতান প্রমুখ প্রথম ধারাটিকে বেগবান করেছেন, আর মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম, মুর্তজা বশীর, হামিদুর রহমান, সৈয়দ জাহাঙ্গীরসহ আরো অনেকে দ্বিতীয় ধারাটিকে সমৃদ্ধ করেছেন। কাজটি করতে গিয়ে তারা যে চিত্রভাষা তৈরি করেছেন তা হয়ে উঠেছে জটিল। এদেশের মানুষের চিত্রকলা অনুধাবনের সমঝদারির অভাবের কারণে তাদের সে ভাষা বুঝতে অনেক সময় লেগেছে। এখনো পরিপূর্ণরূপে তা আত্মস্থ করতে পেরেছেন এমন কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। আর সেজন্যই কিনা জানি না, একটি সাক্ষাৎকারে মুর্তজা বশীর বলেছেন:
‘শিল্পীরা আন্তর্জাতিকতার নামে বিমূর্ততার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু একটি কথা মনে রাখা খুব জরুরি। সেটি হলো, বিমূর্ত চিত্রকলার জন্য যেরকম ক্ষেত্র দরকার তা বাংলাদেশের সামাজিক পটভূমিতে এখনও তেমনভাবে বিস্তৃতি লাভ করেনি। আমেরিকায় হয়েছিল। কারণ ভেঙে যাওয়া সংসার, মা কিংবা বাবা সন্তানকে একা ফেলে অন্যত্র চলে গেছে, অর্থনৈতিক বিকাশের ফলে দৈনন্দিন জীবনে যান্ত্রিকতার প্রভাব বিস্তার (আজকাল সবকিছুই তো অটোমেটিক মেশিনে হচ্ছে)। ফলে জীবনযাপনে অনিবার্যভাবে চলে আসছে একধরনের বিচ্ছিন্নতা। কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিল্পীই উঠে এসেছেন একান্নবর্তী পরিবার থেকে। সেখানে তেমনভাবে কেউ এলিনিয়েটেড নয়। আমি বিস্মিত হই এই পরিপ্রেক্ষিতে কী করে এখানকার শিল্পীরা বিমূর্ত চিত্রকলার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন! যেখানে সমাজে এর কোনো প্রতিকল্প নেই, নাড়ির কোনো বন্ধন নেই?’
কিন্তু শিল্পী মুর্তজা বশীরের চিত্রকর্মের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই দীর্ঘসময় তো তিনি এই বিমূর্ততায়ই অবগাহন করলেন। শৈলী, প্রকরণ ও রঙের ব্যবহার নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালালেন। হতে পারে সে কারণেই তাঁর কাজে বৈচিত্র বেশি; বিষয়ে ও শৈলীতে, এমনকি মাধ্যমেও। লিথোগ্রাফ, এচিং, উডকাড, জলরং, তেলরং ইত্যাদি নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি। তবে তেলরঙে তার স্থায়িত্ব বেশি। এই মাধ্যমে করা কাজই বেশি চোখে পড়ে, যদিও তাঁর ছাপচিত্রের সংখ্যাও কম হবে না।
বিমূর্ত চিত্রকলা সম্পর্কে তাঁর আজকের অবস্থান নিজের পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে আলাদা। ১৯৬০ সালে যে জগতে তিনি প্রবেশ করেছিলেন ২০০৭ সালে জীবনের দীর্ঘ পথপরিক্রমার পর হয়তো তাঁর নতুন উপলব্ধি ঘটেছে। দেশীয় প্রেক্ষাপটে এই শিল্পধারা আমাদের জীবনের সঙ্গে, সাংস্কৃতিক ধারা ও রুচির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় বলে তাঁর মনে হচ্ছে। কিন্তু বিমূর্ত চিত্রকলাও জীবনেরই অংশ। জীবন যদি জটিল হয়ে যায় তবে তার প্রকাশও জটিল হতে বাধ্য। আর সেই জটিলতা প্রকাশ করতে গিয়েই শিল্পীদের বাস্তববাদী রূপরীতি ছেড়ে নতুন রূপরীতি গ্রহণ করতে হয়েছে। এদেশের শিল্পরসিকদের যারা বিমূর্ত ধারার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে মুর্তজা বশীর অবশ্যই একজন।
বাংলাদেশে তাঁরা যখন এইসব ধারার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন তখনকার চেয়ে এখনকার জীবনের জটিলতা অনেক বেশি। যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ষাটের দশকে তাঁর কাছে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছিল আজ নতুন শতাব্দীতে তার প্রাসঙ্গিকতা নেই এমন কথা বললে তার সৃষ্টির অনেকটাই অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। প্রশ্ন জাগবে, কেনো তাহলে এগুলো করলেন? কিন্তু আমি দেখি, বিমূর্ত ও বাস্তববাদী চিত্রকলার যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা তিনি করেছিলেন তাও নানাবিধ। ১৯৫৯ সালে তেলরঙে করা ‘আয়নার সম্মুখে বালিকা’, ১৯৬২ সালে আঁকা ‘মুখ’, ‘জিপসী’ বা ‘গ্রামের দৃশ্য’ শিরোনামের ছবিগুলোতে ঘনকবাদের প্রভাব সুস্পষ্ট। আবার ইমেজ সিরিজের অনেক ছবিই (যেমন-৩, ১০) বিমূর্ত প্রকাশবাদী ধারার। এমনকি ২০০২ সালে আঁকা ‘কালেমা তাইয়্যেবা’ শিরোনামের ছবিগুলোও। আবার ক্যানভাসে নুড়ি বা পাথরের আকৃতি ফুটিয়ে তুলে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি অভিনব। এছাড়াও বিশুদ্ধ বাস্তববাদী ধারায় তো তিনি এঁকেছেনই। নিজেকে যদিও তিনি ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট রিয়েলিস্ট’ বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসতেন।
তাঁর কাজের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো- ধারাবাহিক চিত্রমালা সৃষ্টি। একটি নির্ধারিত বিষয়ের ওপর ধারাবাহিক ছবি নির্মাণ। ‘দেয়াল’, ‘এপিটাফ’, ‘ইমেজ’, ‘আলো’, ‘পাখা’ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে করা ধারাবাহিক চিত্রমালায় একই বিষয়ের ওপর বহুমুখী ভাবনার প্রতিফলন বা একটি বিষয়কে নানাভাবে দেখবার প্রবণতা সুস্পষ্ট। এর সঙ্গে রয়েছে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষ ও নারীকে উপজীব্য করে আঁকা ছবিসমূহ: ‘তোতা হাতে মেয়ে’, ‘দুপুরে শায়িতা মেয়ে’, ‘শাদাবাড়ির মেয়ে’, ‘ফুল হাতে মেয়ে’, ‘মেয়ে হাসছে’ ইত্যাদি। বাঙালির মহান ভাষা আন্দোলনকে নিয়ে করেছেন উডকাট।
১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি পর্যায়ক্রমে কখনো করাচি, কখনো লাহোর আবার কখনো ঢাকায় বসবাস করেছেন। এইসময় থেকেই তিনি প্রথমে লিজার্ড পরে দেয়াল নামের ধারাবাহিক চিত্রকর্ম আঁকা শুরু করেন। বিষয়বস্তু হিসেবে দেয়াল বেছে নেওয়া যথেষ্ট অভিনব। আমাদের চারিদিকে ঘিরে আছে দেয়াল, সর্বত্র খাঁড়া হয়ে আছে সামাজিক-রাজনৈতিক-ধর্মীয় অচলায়তনের প্রতীকরূপে। পলেস্তারা খসে পড়া, লালচে ইট বের করা, ফাটল ধরা দেয়াল তাই বলে। কিন্তু কিছু কিছু দেয়ালে রঙের ব্যবহার দেখলে অন্যরকম মনে হয়। তখন ভাবতে বাধ্য হই দেয়াল কি শুধুই প্রতিবন্ধক? সমাজ প্রগতির অন্তরায়? কিন্তু দেয়াল তো প্রতিরোধেরও প্রতীক, প্রতিবাদ করে দেয়াল, কথা বলে ইতিহাসের অংশ হয়ে, সময় ও কালের সাক্ষী হয়ে। সেই দৃষ্টি দিয়েও একে বিচার করা চলে। তবে এই কাজে পৌনঃপুনিকতা রয়েছ। সংখ্যা বাড়াতে গিয়ে এমনটি হতে পারে। এর বিমূর্ততা নিয়ে বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর যে মন্তব্য করেছেন তা প্রণিধানযোগ্য:
‘১৯৬৬ থেকে তিনি আঁকছেন দেয়াল শীর্ষক ছবি। ঐ পর্যায়ের ঝোঁক নন-ফিগারেটিভ ও অ্যাবস্ট্রাক্ট। দেয়াল হচ্ছে বাস্তবের প্রতীক এবং দেয়াল সর্বত্র এবং চারিদিকে; ঐ সব থেকে প্রতিটি ছাপ ফর্মে পরিণত, রেখা রঙে পর্যবসিত, দেখা দেয় নেত্রপথের নতুন পরিসর, এভাবেই একটি নির্দিষ্ট বাস্তব হয়ে ওঠে এক সার নির্বস্তুকতা।’
‘আলো’ শীর্ষক ধারাবাহিক চিত্রকর্মে আমরা নানা জ্যামিতিক ফর্ম ও রঙের খেলা দেখতে পাই। স্পেস ভেঙে বাদি-বিবাদি-সম্বাদি রঙের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন এবং এই বিষয়টিই মুখ্য মনে হয়।
স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে ‘এপিটাফ’ শীর্ষক ধারাবাহিক চিত্রমালা তৈরি করেন। এদেশের মুক্তিসংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারীদের স্মরণে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে তিনি এই তৈলচিত্রগুলো সৃষ্টি করেছেন। হালকা সাদা কিংবা হলুদের প্রলেপের ওপর তিনি জড়জীবন উপস্থাপনের ঢঙে পাথরের যে ফর্ম তৈরি করেন তা যেন কঠিন বস্তুর মুখে ভাষা দেবার প্রচেষ্টা। পাথরগুলোতে হৃদয়ের আকৃতি বেশি লক্ষ্য করা যায়। সেগুলো, অধ্যাপক নজরুল ইসলামের ভাষায়, ‘শহীদের প্রতি শিল্পীর হৃদয়ের ভালোবাসারই যেন প্রতীক।’
তাঁর কাজের বেশ বড় একট অংশজুড়ে রয়েছে নারী। তাঁর নারীরা মোটেও ভারতীয় চিত্র-ঐতিহ্য অনুসরণে অঙ্কিত নয়। তারা বেশ স্থূলকায়, মাথার তুলনায় দেহ বড়। ‘প্রোপোরশন অব অ্যানাটমি’ মেনে করা হয়নি। চোখে খুব স্বস্তি দেয় না। তবে এ বিষয়টি নিঃসন্দেহে বাস্তবের বাস্তবতা নয়, শৈল্পিক বাস্তবতা। শিল্পী হয়তো নারীকে স্বাস্থ্যবতী দেখতে চান। এগুলো হয়তো তাঁর আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। তবে বশীর বিষয়বস্তু হিসেবে নাটকীয় কোনো কিছু পছন্দ করতে ভালোবাসেন। ‘তোতা হাতে রমণী’, ‘বিবাদরত মোরগ’ এবং ‘তরুণী ও পাখি’, ‘বিড়িওয়ালা’, ‘লেবুগুলো’ ইত্যাদি। তাঁর জীবনবোধ ও অনুসন্ধিৎসা প্রবল। সাদাচোখে যা দেখেন হৃদয় দিয়ে তা উপলব্ধি করতে চাইতেন। সেই বিশুদ্ধ উপলব্ধির ফসল তাঁর চিত্রকলা।
মুর্তজা বশীরের সৃষ্টির একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে ছাপচিত্র (এচিং, একোয়াটিন্ট, ড্রাই পয়েন্ট)। ইমেজ সিরিজের কাজগুলো ছাপচিত্রের, এছাড়াও ‘নগ্নিকা ও পাখি’, ‘উপবিষ্ট নগ্নিকা’, ‘দেয়াল’ ও ‘এপিটাফ’-এর কয়েকটি কাজও ছাপচিত্রে করা। আরো রয়েছে ‘গার্ল উইথ ফ্লাওয়ার’, ‘শী’, ‘বাংলাদেশ-৭১’, ‘আত্মপ্রতিকৃতি’ ইত্যাদি।
তবে একাধিক লেখায় মুর্তজা বশীরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। একজন অভিযোগটি করেছেন প্রচ্ছন্নভাবে, অন্যজন সরাসরি। মঈনুদ্দীন খালেদ লিখেছেন: ‘… যে শিল্পী ১৯৫২-তে এভাবে জ্বলে উঠেছিলেন তিনি কেনো তাঁর পরবর্তীকালের এত পীড়নের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানালেন না সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।… অগ্নিগর্ভ মুর্তজা বশীরের কাছে কালের ভাবনা সম্বলিত চিত্র অনেক বেশি প্রার্থিত ছিল।’
খুবই জোরালোভাবে একই অভিযোগ তুলেছেন এদেশের প্রয়াত চিত্রশিল্পী রফিক হোসেন। ‘বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলনের ইতিহাস’ শীর্ষক একটি গ্রন্থ তিনি রচনা করেছিলেন, কিন্তু তা প্রকাশের আগেই ২০০২ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। বইটি পরে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন: ‘ষাট দশকের মধ্যভাগে তার (মুতর্জা বশীর) মধ্যে যে আত্মচেতনা এবং স্বাধীনতা উত্তরকালে যে দেশাত্মবোধের চেতনা দেখা দিয়েছিল ১৯৭৬ সালে তা সম্পূর্ণ মুছে যায়। বস্তুত ভাষা আন্দোলনভিত্তিক মাত্র একটা ছবি ছাড়া আর কোনো চিত্রকর্মের মধ্যে দেশাত্মবোধের চেতনা দেখতে পাওয়া যায় না। স্বাধীনতাযুদ্ধের তো কোনো আভাসই নেই।’
তবে এই অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নয়। রফিক হোসেন এই মন্তব্য করার সময় তাঁর ‘এপিটাফ’ শিরোনামের ধারাবাহিক চিত্রকর্ম বিবেচনায় নেননি বোধ হয়। মুর্তজা বশীর বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি সুলেখক, শিক্ষক ও প্রত্নগবেষক। আরো একটি পরিচয় তাঁর হারিয়ে গেছে। তিনি চলচ্চিত্র পরিচালকও। ষাটের দশকে ‘কারওয়া’ নামে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু সে-ই প্রথম সে-ই শেষ। কিন্তু শিক্ষকতা, লেখালেখি ও গবেষণাতে তিনি যথেষ্ট সফল। একাধিক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের লেখক তিনি। ব্রিটিশ কাউন্সিলের ফেলোশিপ নিয়ে ‘হেরিটেজ অব বেঙ্গল’ নিয়ে গবেষণা করেছেন, করেছেন পশ্চিম বাংলার মন্দিরের টেরাকোটা শিল্প নিয়ে, মুদ্রা নিয়ে। নানা কাজের ভেতর দিয়ে তিনি বৈচিত্র্য খুঁজেছেন, খুঁজেছেন জীবনের নানা অর্থ─ বস্তুগত এবং অবশ্যই নান্দনিক। সারাজীবন তাঁর এই অন্বেষণ অব্যাহত ছিল, আর এভাবেই তিনি আমাদের শিল্পজগত সমৃদ্ধ করে গেছেন নিত্যনতুন সৃষ্টিতে। তাঁর প্রয়াণে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি।
- শরীফ আতিক-উজ-জামান